আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় কার্যসম্পাদন পরিবীক্ষণ। যা বাউবি ওএসএমবিএ ২২০১ কৌশলগত মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা – ইউনিট ১০ এর অন্তর্গত।
কার্যসম্পাদন পরিবীক্ষণ
কার্যসম্পাদন-পরিবীক্ষণ কার্যসম্পাদন ব্যবস্থাপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের কোনো নির্দিষ্ট সময়ের উদ্দেশ্যার্জনের লক্ষ্যে ব্যক্তি বা দল কর্তৃক সম্পাদিত কার্য পরিমাপ করত কার্যকারিতা নির্ধারণ করা হয় এবং প্রয়োজনীয় সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। কার্যসম্পাদন-পরিবীক্ষণ সম্পাদিত কার্যের গতিবিধি নির্ধারণ, সমস্যা চিহ্নিতকরণ এবং প্রয়োজনীয় সমন্বয়করণ কাজের সাথে সম্পৃক্ত।
কার্যসম্পাদন-পরিবীক্ষণকে জাহাজের দিক-নির্দেশনা নিয়ন্ত্রণের (Steering Control) সাথে তুলনা করা যায়। স্টিয়ারিং বা দিক নির্দেশক জাহাজকে গন্তব্যের পথে চালিত করে, পথচ্যুত হতে দেয় না। একইভাবে, কার্যসম্পাদন পরিবীক্ষণ নির্ণয় করে যে, একজন ব্যক্তি বা একটি দলের কার্যসম্পাদন প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনে কতটুকু সফল হচ্ছে এবং এটি তাদের নিকট বলে দেওয়া হয় যেন সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় সময়মতো।
কার্যসম্পাদন-পরিবীক্ষণ পরামর্শ ও কোচিং এর মাধ্যমে ব্যক্তি ও দলের কার্যসম্পাদনে কোনো বিচ্যুতি বা ভুল থাকলে তা সংশোধন করে এবং কার্যের গতিপথ ঠিক রাখে। কার্যসম্পাদন-পরিবীক্ষণ হলো ব্যবস্থাপকীয় উদ্যোগ। কারণ এটি প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্যার্জনের জন্য নিয়মিতভাবে নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করে। যাই হোক, কার্যসম্পাদন-পরিবীক্ষণ সুবিধাভোগীদের প্রয়োজনের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল।

ব্যক্তির কার্যসন্তুষ্টি, উন্নয়ন, নিরাপত্তা, স্বীকৃতি ও পুরস্কার এর প্রয়োজনকে প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনের সাথে সমন্বয় করতে হবে এবং সে মোতাবেক বছরব্যাপী কার্যসম্পাদন-পরিবীক্ষণ কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে, যেন সকলের স্বার্থ সংরক্ষিত হয় ।
কার্যসম্পাদন-পরিবীক্ষণ হলো একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কর্মীদের দ্বারা সম্পাদিত কার্য সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়; যেন কর্মী ও প্রতিষ্ঠান সকলের প্রত্যাশা মোতাবেক কার্যসম্পাদিত হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করা হয়। এর মাধ্যমে কর্মীদের কার্যসম্পাদনের মান উন্নত করার প্রয়াস চালানো হয়।
Hayues এর মতে, “কার্যসম্পাদন-পরিবীক্ষণ কর্মীদের কার্য পদ্ধতি ও কার্যসম্পাদন মূল্যায়নে অবদান রাখে।” (Performance monitoring makes a contribution in the evaluation of work methods and employee performance.) কার্যসম্পাদন-পরিবীক্ষণকে এভাবেও বলা যায় যে,
এটি একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে নিয়মিতভাবে শিক্ষা ও উন্নয়ন, পরিকল্পিত স্তরে কর্মীদের কাজ ধরে রাখা, ক্তির যোগ্যতা বৃদ্ধি এবং উৎপাদনশীল অবদানের জন্য প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে কর্মীদের প্রতিযোগিতামূলক শক্তি বৃদ্ধি করা হয়।
উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে দেখা যায় যে, কার্যসম্পাদন-পরিবীক্ষণ নিচে উল্লিখিত বিষয়ে অবহিত করে:
(i) কার্য মূল্যায়ন শেষে কর্মীদের নিয়মিত কার্যসম্পাদন উন্নয়নের জন্য সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপসমূহের বর্ণনা;
(ii) বিভিন্ন ধরনের সংশোধনের জন্য যে সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে এবং ফল অর্জিত হয়েছে, তার বিবরণ;
(iii) কার্যভারের প্রভাব বা প্রতিক্রিয়া;
(iv) প্রতিষ্ঠানের সম্পদসমূহের ফলপ্রসূ ব্যবহার;
(v) কর্মী কর্তৃক মূল্য সৃষ্টি ।
সুতরাং বলা যায় যে, কার্যসম্পাদন-পরিবীক্ষণ হলো এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে কর্মীদের দ্বারা সম্পাদিত কার্যের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণপূর্বক দিক-নির্দেশনা দেওয়া যেন প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্যার্জনে কার্য পথচ্যুত না হয় এবং প্রয়োজন হলে যেন সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।
আরও দেখুন :
কৌশলগত পরিকল্পনা ও কার্যসম্পাদন ব্যবস্থাপনার মধ্যে সংযুক্তকরণ প্রক্রিয়া