শৃঙ্খলা বিধান কার্যের পদক্ষেপ সমূহ

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় শৃঙ্খলা বিধান কার্যের পদক্ষেপ সমূহ।  প্রতিষ্ঠানে সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল কার্য পরিবেশ বজায় রাখার জন্য শৃঙ্খলা বিধান কার্যের পদক্ষেপসমূহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে শৃঙ্খলা বিধান কার্যের পদক্ষেপ গ্রহণ কালে কোনো প্রকার তাড়াহুড়া করা যাবে না । নিম্নে শৃঙ্খলা বিধান কার্যের পদেক্ষপসমূহ আলোচনা করা হলো:

শৃঙ্খলা বিধান কার্যের পদক্ষেপ সমূহ

 

শৃঙ্খলা বিধান কার্যের পদক্ষেপ সমূহ

 

শৃঙ্খলা সমস্যা চিহ্নিতকরণ (Identification of the disciplinary problem):

এটা শৃঙ্খলা বিধান কার্যের প্রথম পদক্ষেপ। এই পদক্ষেপের আওতায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি উৎস ও কারণ চিহ্নিত করতে হবে। এই কাজগুলো করতে ব্যর্থ হলে সমস্যার কার্যকর সমাধান করা সম্ভব হবে না।

শৃঙ্খলা সমস্যার সঠিক বিবরণ (Accurate statement of the diciplinary problem):

শৃঙ্খলা বিধান কার্যের দ্বিতীয় পদক্ষেপ হচ্ছে শৃঙ্খলা সমস্যার বিবরণ সংগ্রহ করা। অর্থাৎ যে কারণে শৃঙ্খলা ভঙ্গ হয়েছে সেই কারণ সম্পর্কে পূর্ণবিবরণ সংগ্রহ করা এই পদক্ষেপের কাজ। এই জন্য কতগুলো বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। যেমন- শৃঙ্খলা ভঙ্গের প্রকৃতি, অপরাধের পূর্ণ বিবরণ, কোনো অবস্থায় তা সংগঠিত হয়েছে তার বিবরণ, বিশৃঙ্খলা ঘটনার সাথে কোনো কোনো ব্যক্তি জড়িত, উক্ত অপরাধ কখন ও কত ঘন ঘন সংঘটিত হচ্ছে ইত্যাদি। উপরে উল্লিখিত এই বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রেখে বিশৃঙ্খলার একটি সঠিক বিবরণী প্রস্তুত করতে হবে ।

সঠিক তথ্য সংগ্রহ (Collecting authentic information) :

শৃঙ্খলা বিধান কার্যের তৃতীয় পদক্ষেপ হচ্ছে বিশৃঙ্খলা সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহকরণ। সঠিক তথ্য সংগ্রহের জন্য সংগ্রহকারীকে কিছু বিষয়ক স্মরণ রাখতে হবে। যেমন: সৃষ্ট সমস্যার প্রত্যেকটি বিষয় সুষ্ঠু ও যথাযথভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে, সংগৃহীত তথ্য ভালোভাবে পরীক্ষা করতে হবে এবং তথ্য সংগ্রহের সময় সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতে হবে।

সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ (Analysis of collected infromation):

শৃঙ্খলা বিধান কার্যের চতুর্থ পদক্ষেপ হচ্ছে সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ। আসলে সংগৃহীত সব তথ্যই যে নির্ভরযোগ্য হবে তা কিন্তু নয়। তথ্য সংগ্রহ করার সময় এমন অনেক তথ্যাবলি পাওয়া যেতে পারে যেগুলো যথেষ্ট নির্ভরযোগ্য বা গ্রহণযোগ্য নহে। আর এই কারণেই সংগৃহীত তথ্যগুলো যথাযথভাবে বিচার বিশ্লেষণ করে নির্ভরযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য তথ্যবলিকে বেছে নিতে হবে এবং বাকী তথ্যগুলোকে বাদ দিতে হবে।

 

Google News
আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন

 

প্রাথমিক শাস্তি বিধান (Establishing tentative penalties ) :

শৃঙ্খলা বিধান কার্যের পঞ্চম পদক্ষেপ হচ্ছে প্রাথমিক শাস্তি বিধান করা। অর্থ্যাৎ এই পর্যায়ে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে অভিযুক্ত কর্মীকে শাস্তি দেয়া হবে কি না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। সংগৃহীত তথ্য বিচার বিশ্লেষণ করে যদি শাস্তি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে গঠনমূলক, ইতিবাচক ও আত্মশৃঙ্খলা ব্যবস্থার প্রতি কর্মীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বলা হয়। আর যদি শাস্তির ব্যবস্থা করা হয় তবে এর ধরন ও আদর্শ শাস্তির কার্যকারিতা সম্পর্কে সতর্ক দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন ।

শাস্তি নির্বাচন (Selecting penalty):

এটি শৃঙ্খলা বিধান কার্যের ষষ্ঠ পদক্ষেপ। এই পর্যায়ে এসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির দায়ে অভিযুক্ত কর্মীকে শাস্তিদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এই শাস্তিদানের কতগুলো বিকল্প থাকতে পারে। যেমন মৃদু শাস্তি, কঠিন শাস্তি ইত্যাদি। এখন এই বিকল্পগুলোর মধ্য থেকে কোনোটি শৃঙ্খলা ভঙ্গেও দায়ে অপরাধী কর্মীর জন্য প্রয়োগ করা হবে তা এই স্তরেই নির্ধারণ করতে হবে।

শাস্তি প্রয়োগ (Applying penalty ):

শৃঙ্খলা বিধান কার্যের সপ্তম পদক্ষেপ হচ্ছে শাস্তি প্রয়োগ। শাস্তি প্রয়োগের এই কাজটি মূলত ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের ওপর ন্যস্ত। তবে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকেও নিশ্চিত হতে হবে যে, তাদের শাস্তি বিধানের সিদ্ধান্ত ন্যায্য ও সঠিক হয়েছে। যদি কেবলমাত্র সতকর্তা অবলম্বনের জন্য শাস্তি প্রদান ব্যবস্থা করা হয় সেই ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের উচিত অত্যন্ত নমনীয় দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দ্রুততার সাথে বিষয়টি নিস্পত্তি করা। আর যদি কঠিন ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে তাৎক্ষণিক ও দৃঢ়তার সাথে বিষয়টির নিষ্পত্তি করা প্রয়োজন । অন্যথায় প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সততা এবং গৃহীত সিদ্ধান্তের উপযুক্ততা নিয়ে কর্মীদের মনে সন্দেহের সৃষ্টি হতে পারে।

শৃঙ্খলা বিধান কার্য মূল্যায়ন ও অনুগমণ (Evaluation and follow-up of the disciplinary action):

এট হচ্ছে শৃঙ্খলা বিধান কার্যের অষ্টম ও সর্বশেষ পদক্ষেপ। এই পর্যায়ে এসে এটা পর্যবেক্ষণ করা হয় যে শৃঙ্খলা বিধানের জন্য যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে তা সঠিক ভাবে সম্পাদিত হচ্ছে কিনা। শৃঙ্খলা বিধান কার্য মূল্যায়ন ও অনুগমণ দ্বারা শৃঙ্খলা বিধান কার্যে গৃহীত পদক্ষেপের অনুধাবন করা যায়, ভুল-ত্রুটি শনাক্ত করা যায় এবং প্রয়োজনীয় সংশোধনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।

 

শৃঙ্খলা বিধান কার্যের পদক্ষেপ সমূহ

চিত্র : শৃঙ্খলা বিধান কার্যের পদক্ষেপ

 

আরও দেখুন :

Leave a Comment