প্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা বিধান কার্যের প্রক্রিয়া

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় শৃঙ্খলা বিধান কার্যের প্রক্রিয়া। প্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা বিধান কার্য সম্পাদনের ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে কতগুলো পর্যায় বা ধাপ অতিক্রম করতে হয়। এ পর্যায় বা ধাপগুলোতে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়। একটা পর্যায় থেকে অন্য পর্যায় অতিক্রম করলে শাস্তির মাত্রাও ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পায়। শৃঙ্খলা বিধান প্রক্রিয়ার সর্বশেষ ধাপ বা পর্যায় হচ্ছে চাকুরিচ্যুতি। তবে এরূপ চূড়ান্ত ব্যবস্থা গ্রহণের পূর্বে কর্মীদের শৃঙ্খলা বিধান প্রক্রিয়ার অন্যান্য সব ধাপ অতিক্রম করানো হয় যাতে কর্মী নিজেকে সংশোধনের সুযোগ পায়।

শৃঙ্খলা বিধান কার্যের প্রক্রিয়া

 

সাধারণত শৃঙ্খলা বিধান কার্য প্রক্রিয়ায় যে সব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় বা যেসব ধাপ অতিক্রম করা হয় তা নিম্নে ছকের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হলো এবং আলোচনা করা হলো।

 

শৃঙ্খলা বিধান কার্যের প্রক্রিয়া

চিত্র : শৃঙ্খলা বিধান কার্যের প্রক্রিয়া

মৌখিক সর্তকর্তা (Verbal Warning):

মৌখিক সর্তকর্তা হচ্ছে শৃঙ্খলা বিধান প্রক্রিয়ার প্রথম পদক্ষেপ। এই মূলত কর্মীর ছোট খাটো ভুলত্রুটি সংশোধনের জন্য গ্রহণ করা হয়ে থাকে। এটি একটি অনানুষ্ঠানিক পদক্ষেপ যার মাধ্যমে ব্যবস্থাপক কর্মীকে জানিয়ে দেয় যে, এরূপ অবস্থা চলতে থাকলে কর্তৃপক্ষ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন ।

 

মৌখিক তিরস্কার (Verbal Reprimand):

শৃঙ্খলা বিধান প্রক্রিয়ার দ্বিতীয় ধাপ বা পর্যায় মৌখিক তিরস্কার। এই পর্যায়ে ব্যবস্থাপকগণ কর্মীকে মৌখিক তিরস্কারের মাধ্যমে তার কাজের জন্য নিন্দা জ্ঞাপন করে থাকেন ।

 

লিখিত সতর্কতা (Written Warning):

শৃঙ্খলা বিধান প্রক্রিয়ার তৃতীয় ধাপ বা পর্যায় হচ্ছে লিখিত সতর্কতা। এটি একটি আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় শৃঙ্খলা ভঙ্গ, তার ফলাফল এবং সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ শৃঙ্খলা ভঙ্গের পরিণাম সম্পর্কে কর্মীকে লিখিতভাবে অবহিত করা হয়। এক্ষেত্রে ব্যবস্থাপক লিখিত প্রতিবেদন প্রণয়ন করেন যাতে কর্মীর ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে লিপিবদ্ধ করা হয় এবং পূর্ববর্তী পর্যায়গুলো সম্পর্কেও উল্লেখ করা হয় ।

 

Google News
আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন

 

বেতন ভাতা কর্তন ( Reduce Pay ) :

কর্মীর বেতন কেটে বা বেতন কমিয়ে দেওয়া ব্যবস্থাপনা কর্তৃক শৃঙ্খলা বিধান কার্যের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই ব্যবস্থায় কর্মীর অপরাধের পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে সেই জন্য নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কর্মীর বেতন কেটে রাখা হয়। শৃঙ্খলা বিধান কার্যের পদক্ষেপ কখনো কখনো ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ কর্মীর বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বন্ধ করে দেন।

 

বদলি বা পদাবনতি (Tranfer or Demotion):

শৃঙ্খলা বিধান কার্যের পদক্ষেপ হিসাবে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী কর্মীকে বদলি বা পদাবনতি মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহন করে থাকে। এই পদক্ষেপের ধারাবাহিকতা হিসাবে শৃঙ্খলাভঙ্গকারী কর্মীকে সংশোধনের সুযোগদানের লক্ষ্যে অপেক্ষাকৃত প্রত্যান্তর অঞ্চলে বা তুলনামূলক ভাবে খারাপ পরিবেশের কর্মস্থলে বদলি করা হয়। আবার অপরাধের মাত্রা অধিক হলে কোনো কোনো কর্মীকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য পদাবনতির মতো সিদ্ধান্ত ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করে থাকেন।

 

সাময়িক কর্মচ্যুতি (Suspension):

শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী কর্মী যদি উপরের উল্লিখিত পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করার পরও সংশোধন না হয় বা বিশৃঙ্খল কর্মকান্ডের সম্পৃক্ত থাকে সেক্ষেত্রে তাকে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ সাময়িকভাবে কর্মচ্যুতি করে থাকেন। সাময়িক কর্মচ্যুতির আওতায় কর্মীর শৃঙ্খলা ভঙ্গের বিষয়ে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়। তবে বাংলাদেশে এরূপ অবস্থায় নির্দিষ্টহারে ভাতা দেওয়া হয়ে থাকে ।

 

শৃঙ্খলা বিধান কার্যের প্রক্রিয়া

 

বরখাস্ত বা চাকুরিচ্যুতি (Discharge):

এটা শৃঙ্খলা বিধান কার্যের সর্বশেষ ধাপ। কর্মীর ওপর আনিত অভিযোগ যদি সে খন্ডন করতে না পারে বা কর্মীর ওপর আনিত অভিযোগ যদি প্রমাণিত হয় সেক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ কর্মীকে বরখাস্ত বা চাকুরিচ্যুত করে থাকেন। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ সংরক্ষণের বিষয়টি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের কাছে সবচেয়ে গুরুত্ব পায় এবং এর ফলে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধে অপরাধী কর্মীর চাকরি হারানোর বিষয়টি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের কাছে গুরুত্ব পায় না ।

 

আরও দেখুন :

Leave a Comment