আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় পদ বা কার্য মূল্যায়নের পদ্ধতিসমূহ
Table of Contents
পদ বা কার্য মূল্যায়নের পদ্ধতিসমূহ
পদ বা কার্য মূল্যায়নের পদ্ধতিসমূহ
চিত্র : পদ মূল্যায়ন পদ্ধতিসমূহ
পদ মূল্যায়ন প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিম্নে পদ বা কার্য মূল্যায়নের বিভিন্ন পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
অসংখ্যাত্মক পদ্ধতি (Non-Quantitative method):
অসংখ্যাত্মক পদ্ধতির আওতায় প্রতিষ্ঠানে দুই ধরনের পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়ে থাকে। যথা:-
ক) পদ র্যাঙ্কিং পদ্ধতি
খ) কার্যের শ্রেণিবিভাগ করণ পদ্ধতি
পদ র্যাঙ্কিং পদ্ধতি (Job ranking method):
পদ মূল্যায়নের বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে পদ র্যাঙ্কিং পদ্ধতি হচ্ছে অত্যন্ত সহজ একটি পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও কঠিন কার্যসমূহ থেকে সবচেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ ও সহজ কার্যসমূহকে সাজানো হয় বা র্যাঙ্কিং করা হয়। অন্যভাবে বলা যায় যে গুরুত্বের ভিত্তিতে পদসমূহকে ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত সাজিয়ে র্যাঙ্কিং করাই হচ্ছে পদ র্যাঙ্কিং পদ্ধতির মূল কাজ।
ব্যবস্থাপনা ও কর্মীদের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করে এই ধরনের র্যাঙ্কিং কার্য সম্পাদন করা যেতে পারে। কমিটি কাজের প্রকৃতি, গুরুত্ব, দায়িত্ব কাজের জটিলতা, কাজের পরিবেশ, দক্ষতা প্রয়োজনীয়তা ইত্যাদি উপাদান বিবেচনা করে একটি পদের সাথে অন্যপদের তুলনার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেকটি পদের তুলনা করে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজকে প্রথমে এবং সবচেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ কাজকে সবচেয়ে শেষে সাজিয়ে র্যাঙ্কিং বা পদমর্যাদা বিন্যাস করে থাকে।
পদ র্যাঙ্কিং পদ্ধতির সুবিধা (Merits of Job Ranking Method):
- পদ র্যাঙ্কিং পদ্ধতি সবচেয়ে সহজ একটি পদ্ধতি
- এই পদ্ধতিতে কম অর্থ ব্যয় হয়
- এই পদ্ধতিতে কম সময় লাগে
- এই পদ্ধতি কর্মীদের মনোবল বৃদ্ধি করে এবং কার্যসন্তুষ্টি আনয়ন করে।
অসুবিধা (Disadvantages):
- বড় প্রতিষ্ঠান যেখানে অনেকগুলো পদ থাকে সেখানে পদ র্যাঙ্কিং পদ্ধতির প্রয়োগ অসুবিধাজনক ।
- এই পদ্ধতিতে সিদ্ধান্তহীনতা তৈরি হয়।
- এই পদ্ধতি ব্যক্তিক ইচ্ছা-অনিচ্ছা দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে।
- এই পদ্ধতিতে সামঞ্জস্যপূর্ণ পদসমূহের তুলনা করা অসুবিধাজনক।
- এই পদ্ধতিতে পরিপূর্ণ তথ্যের ভিত্তিতে পদ মূল্যায়ন করা হয় না বলে এটি সুপ্রতিষ্ঠিত মান হিসাবে বিবেচ্য নয়।
কার্যের বা পদের শ্রেণিবিভাগকরণ পদ্ধতি ( Job grading method):
কার্য বা পদের শ্রেণি বিভাগকে গ্রেডিং পদ্ধতি বলা হয়ে থাকে। আমেরিকান সিভিল সার্ভিস কমিশন (American Civil Service Commission) বর্তমানে যার নাম Office of Personnel Management (OPM) কর্তৃক এ পদ্ধতি প্রবর্তিত হয় এবং পরবর্তিতে তা অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এই পদ্ধতিতে কাজের দক্ষতা জ্ঞান ও কার্য সম্পাদনের জটিলতার ভিত্তিতে কার্য বা পদসমূহের শ্রেণিবিভাগ বা গ্রেডিং করা হয়ে থাকে।
সে সব কাজ সম্পাদন করার জন্য কাছাকাছি ধরনের দক্ষতা, জ্ঞান ও এবং জটিলতা রয়েছে সেই সকল কার্যগুলোকে একই শ্রেণিভুক্ত করা হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে যে একটি প্রতিষ্ঠানের কেরাণি, অফিস সহকারী, মুদ্রাক্ষরিক, গবেষণা সহকারী ইত্যাদি পদের কাজ সম্পাদনের জন্য কাছাকাছি ধরনের দক্ষতা ও জ্ঞানের প্রয়োজন হয় এবং এই ধরনের কাজের জটিলতাও কাছাকাছি ধরনের হয়ে থাকে। তাই এই পদগুলোকে একই শ্রেণিভুক্ত করা হয়।
পদের শ্রেণিবিভাগকরণ পদ্ধতির সুবিধা (Merits of job grading method ):
- এই পদ্ধতি অত্যন্ত সহজবোধ্য ও গ্রহণযোগ্য। আর এই কারণেই এই পদ্ধতি অত্যন্ত সহজে পরিচালনা করা যায়।
- এই পদ্ধতির ব্যয় তুলনামূলকভাবে কম। আর এই জন্যই ছোট প্রতিষ্ঠানের জন্য এই পদ্ধতি উপযুক্ত।
- এই পদ্ধতি সরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য খুবই কার্যকর।
পদের শ্রেণিবিভাগকরণের অসুবিধা (Demerits of job grading method):
- পদ্ধতিতে শ্রেণিবিভাগকরণে ব্যক্তিগত ভাবাবেগ প্রভাব বিস্তার করতে পারে।
- এই পদ্ধতিতে গ্রেড বা শ্রেণিসমূহের বর্ণনা করা কঠিন।
- জটিল কাজের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি উপযুক্ত নয়।

সংখ্যাত্মক পদ্ধতি (Quantitative method ):
সংখ্যাত্মক পদ্ধতি দুই ধরনের হয়ে থাকে। যথা:-
(ক) নম্বর প্রদান পদ্ধতি (Point rating method)
(খ) উপাদান তুলনাকরণ পদ্ধতি (Factor comparison method)
নম্বর প্রদান পদ্ধতি (Point rating method):
এই পদ্ধতিতে কাজকে বিভিন্ন ছোট ছোট উপাদানে বিভক্ত করে নম্বর প্রদান করা হয়। যেমন কোনো কাজকে প্রয়োজনীয় দক্ষতা, জ্ঞান, প্রচেষ্টা, প্রশিক্ষণ, দায়িত্ব, বাধা ইত্যাদি নানানভাবে বিভক্ত করে নম্বর প্রদান করা হয়। নম্বর প্রদানের পর একই সমান বা কাছাকাছি মানের প্রাপ্ত যোগফলধারী পদগুলোকে একই বেতন স্কেলের আওতায় আনা হয়।
নম্বর প্রদান পদ্ধতির সুবিধা (Merits of point rating method ):
- এই পদ্ধতিটি বিজ্ঞানসম্মত। ছোট বড় সব ধরনের প্রতিষ্ঠানে এ পদ্ধতি ব্যবহার করা যায়।
- এই পদ্ধতিটি অন্যসব কার্য মূল্যায়ন পদ্ধতির তুলনায় বেশি সুসমন্বিত এবং নির্ভুল বলে মনে করা হয়।
- এই পদ্ধতিতে ন্যায্য ও যথাযথ বেতন ও মজুরি নির্ধারণ করা সম্ভব হয়। * এই পদ্ধতিতে পদের শ্রেণিবিভক্তকরণ সহজতর হয়।
নম্বর প্রদান পদ্ধতির অসুবিধা (Demerits of point rating method )
- এই পদ্ধতিটি ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ পদ্ধতি
- ব্যবস্থাপকীয় কাজের জন্য এই পদ্ধতিটি উপযুক্ত নয়। কারণ ব্যবস্থাপকীয় কার্য উপাদানগুলোকে সরাসরি পরিমাণবাচক উপায়ে মাপা যায় না।
- এই পদ্ধতিতে অসাবধানতাবশত সামান্য ভুলের কারণে কর্মীদের বেতন কাঠামোতে বৈষম্য সৃষ্টি হতে পারে।
উপাদান তুলনা করণ পদ্ধতি (Factor comparison method):
উপাদান তুলনাকরণ পদ্ধতিটি নম্বর প্রদান পদ্ধতি ও কার্য তুলনাকরণ পদ্ধতির সমন্বিত রূপ। পদ তুলনাকরণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় দক্ষতা, প্রয়োজনীয় মানসিক শক্তি, প্রয়োজনীয় শারীরিক শক্তি, দায়িত্ব এবং কার্যপরিবেশ প্রভৃতি উপাদানসমূহকে বিবেচনা করে পদ বা কার্যসমূহের তুলনা করা হয়। এই পদ্ধতিটি প্রতিষ্ঠানের উর্ধ্বতন পর্যায়ের কর্মকর্তা, পেশাজীবী এবং ব্যবস্থাপকদের পদমূল্যায়নের জন্য উপযুক্ত ।
উপাদান তুলনাকরণ পদ্ধতির সুবিধা (Merits of factor comparison method):
- বিভিন্ন পদের তুলনামূলক মূল্য নির্ধারণে এই পদ্ধতিটি সহায়তা করে;
- এই পদ্ধতিতে ন্যায্য বেতন কাঠামো নির্ধারণ করে ব্যবস্থাপনা ও কর্মীদের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝি দূর করা যায়;
- এই পদ্ধতিটি অনেক বেশি বস্তুনিষ্ঠ;
- এই পদ্ধতিটি অনেক বেশি নমনীয় কারণ এই পদ্ধতিতে উপাদান রেটিং এর ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সীমা থাকে না ।
উপাদান তুলনাকরণ পদ্ধতির অসুবিধা (Demerits of factor comparison method)
- এই পদ্ধতিটি ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ * এই পদ্ধতিটি ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানে প্রয়োগ করা যায় না ;
- এই পদ্ধতিতে শুধুমাত্র পাঁচটি কার্য উপাদানের ওপর ভিত্তি করে পদ মূল্যায়ন করা হয় বলে, অনেক প্রয়োজনীয়
উপাদান বাদ পড়ে যায়; - এই পদ্ধতিতে পদমূল্যায়ন বেশ জটিল এবং দুর্বোধ্য।
বাজারমূল্য পদ্ধতি (Market Price Method):
পদমূল্যায়নের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের প্রয়োজন মাফিক বাজারমূল্য পদ্ধতি অনুসরণ করে থাকে। মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে প্রতিযোগিতামূলক শ্রম বাজার বিবেচনা করে কর্মীদের বেতনও আজকাল চাহিদা ও যোগানের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়ে থাকে ।
সুবিধা (Merits of pricing method):
- এই পদ্ধতি কর্মীদের জন্য সহজ বোধ্য;
- এই পদ্ধতিতে সময় ও খরচ কম লাগে কারণ এই পদ্ধতিতে পদ্ধতিগত মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় যেতে হয় না।
অসুবিধা (Demerits of princing method)
- এই পদ্ধতিতে কর্মীরা বেতন কাঠামোর দিক থেকে বৈষম্যের শিকার হয়। বিশেষ করে মহিলা কর্মীরা এই বৈষম্যের শিকার হয়।
- এই পদ্ধতিতে প্রতিযোগিতামূলক শ্রমবাজার বিবেচনায় আনার কারণে শ্রমিকের কল্যাণমূলক বিবেচনা অবহেলিত থেকে যায়।
উদ্দেশ্যমূলক ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি (MBO Method) :
উদ্দেশ্যমূলক ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিতে প্রত্যেক কর্মীর সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য ও চাহিদা নিরূপণ কওে পদমূল্যায়ন করা হয়।
সুবিধা (Merits of MBO method):
- এটি একটি সুনির্দিষ্ট মূল্যায়ন পদ্ধতি;
- এই পদ্ধতি তুলনামূলকভাবে সহজ;
অসুবিধা ( Demerits of MBO method)
- এই পদ্ধতি একটি ব্যয়বহুল পদ্ধতি।
- এই পদ্ধতিতে কর্মীদের সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যের দিকে গুরুত্ব দেওয়া হয় বলে অর্থের ব্যয় অপেক্ষাকৃত বেশি হয়।
আরও দেখুন :