আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় কৌশল নির্বাচনে বিবেচ্য বিষয়সমূহ । যা বাউবি ওএসএমবিএ ২২০১ কৌশলগত মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা – ইউনিট ২ এর অন্তর্গত।
Table of Contents
কৌশল নির্বাচনে বিবেচ্য বিষয়সমূহ
ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে কৌশল নির্ধারণের ক্ষেত্রে যে সমস্ত বিষয় বিচার-বিশ্লেষণ করা হয় নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো:
প্রাতিষ্ঠানিক উদ্দেশ্যাবলি:
কৌশল নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক উদ্দেশ্যের প্রকৃতি বিচার-বিবেচনা করতে হয়। উদ্দেশ্যের প্রকৃতি বিচার-বিবেচনায় মূলত তিনটি বিষয়ের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়; যথা— দ্রুত ফল লাভের প্রয়োজনীয়তা, উদ্দেশ্য সম্বন্ধে ঐকমত্য ও সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রত্যাশা।
(ক) দ্রুত ফল লাভের প্রয়োজনীয়তা:
প্রাতিষ্ঠানিক উদ্দেশ্যের আলোকে জরুরীভিত্তিতে ফল লাভের প্রয়োজন দেখা দিলে ‘ধীরে চলার কৌশল’ বা ‘অকিঞ্চিৎকর’ প্রারম্ভের কৌশল গ্রহণ করা যায় না। এই ক্ষেত্রে ‘কানে তুলা দেওয়ার কৌশল’ বা ‘দ্রুত কাজ শেষ করার কৌশল’ অনুসরণ করা যেতে পারে।
(খ) উদ্দেশ্য সম্বন্ধে ঐকমত্য:
প্রাতিষ্ঠানিক উদ্দেশ্য সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহের মধ্যে ঐকমত্য থাকলে ‘খোলা মনে আলোচনার কৌশল’ গ্রহণ করা যেতে পারে। পক্ষান্তরে, সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহের মধ্যে উদ্দেশ্য সম্বন্ধে ঐকমত্য না থাকলে “কৈ- এর তেলে কৈ ভাজার কৌশল’ বা ‘দুর্বল জায়গায় আঘাত হানার কৌশল’ গ্রহণ করা যেতে পারে ।
(গ) সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রত্যাশা:
উদ্দেশ্য অর্জনের লক্ষ্যে দীর্ঘকালীন সহযোগিতা প্রয়োজন হলে প্রতি আক্রমণের কৌশল বা ‘অপরের ঘাড়ে দোষ চাপানোর কৌশল’ সাধারণত ফলপ্রসূ হয় না। এই ক্ষেত্রে ‘একতাই বল’ বা আলোচনা কৌশল অধিকতর ফলপ্রসূ হয়।
সমস্যার প্রকৃতি:
উদ্দেশ্য অর্জনের প্রয়াস উদ্ভূত পরিস্থিতির প্রকৃতির উপর কৌশল নির্বাচন অনেকাংশে নির্ভরশীল। বৃহত্তর স্বার্থ সংরক্ষণকল্পে তাৎক্ষণিক, অযৌক্তিক, অনভিপ্রেত এবং স্বাভাবিক রীতিনীতির পরিপন্থী কোনো কার্যসম্পাদন করা অনেক সময় যুক্তিযুক্ত হয়। বিশেষ করে দীর্ঘকালীন সময়ে কোনো স্থানে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ অব্যাহত থাকলে ‘অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা গ্রহণ করার কৌশল’ গ্রহণ করা হয় ।
অভ্যন্তরীণ ও অনাভ্যন্তরীণ চলকসমূহ:
প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নমূলক কার্যসহ অন্যান্য বিষয়ে পরিবর্তন আনয়নের ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ ও অনাভ্যন্তরীণ চলকসমূহ বিচার-বিবেচনা করতে হয়। অভ্যন্তরীণ পরিবেশের ন্যায় অনাভ্যন্তরীণ পরিবেশও প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমে বিভিন্নভাবে প্রভাব বিস্তার করে থাকে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, পার্শবর্তী এলাকার শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের বোনাস প্রদান করলে ব্যবস্থাপনাকে স্বীয় শিল্প-প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের জন্য বোনাসের ব্যবস্থা করতে হয় । তা না হলে শ্রমিক-শিল্প সম্পর্কে অবনতি ঘটার আশংকা দেখা দেয়।
বস্তুগত ও মানব সম্পদের বর্তমান অবস্থা:
কৌশল প্রণয়নে বস্তুগত ও মানব সম্পদের বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। তাদের বিচার-বিশ্লেষণে প্রধানত সম্পদের প্রাপ্যতা, নির্বাহীদের মন-মানসিকতা ও প্রচলিত মূল্যবোধের বিচার- বিশ্লেষণ করা হয় । নিম্নে এদের আলোচনা করা হলো :
(ক) বর্তমান সম্পদ:
প্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত মাত্রায় পুঁজি ও মানব সম্পদ থাকলে ‘দ্রুত কাজ শেষ করার কৌশল’ গ্রহণ করা যেতে পারে। অন্যদিকে, উভয়বিধ বা যে কোনো একটি সম্পদ পর্যাপ্ত না থাকলে ‘ক্ষমা সংরক্ষণ কৌশল’ গ্রহণ করা হয় ৷
(খ) নির্বাহীদের মন-মানসিকতা:
‘ধীরে চলার কৌশল’ বা ‘প্রতি-আক্রমণ কৌশল’ বা ‘ঘোলা পানিতে মাছ শিকার কৌশল’ বা ‘পাশ কাটিয়ে যাওয়ার কৌশল’ ইত্যাদি গ্রহণের বিষয় অনেকাংশে নির্বাহীদের মন মানসিকতা ও তাদের ব্যক্তিগত ভাবাবেগ দ্বারা প্রভাবিত হয়।

(গ) প্রচলিত ধ্যান-ধারণা:
প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহের প্রচলিত ধ্যানধারণার উপর কৌশল নির্বাচন অনেকাংশে।। নির্ভরশীল। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ‘দরকষাকষির কৌশল’ সংশ্লিষ্ট পক্ষ ঘৃণার চোখে দেখে না কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে ‘দরকষাকষির কৌশল’ সংশ্লিষ্ট পক্ষের নিকট অগ্রহণযোগ্য হয়। অনুরূপভাবে, ‘বিভাজন ও শাসনের কৌশল’ বিশেষ ক্ষেত্রে সুফলদায়ক হলেও স্তরভেদে বা পরিবেশভেদে তার পরিণতি আশাব্যাঞ্জক হয় না। কারণ, কৌশলের গ্রহণযোগ্যতা অনেকাংশে প্রচলিত রীতি, মূল্যবোধ, সংস্কৃতি ও জনগণের প্রচলিত ধ্যান-ধারণা দ্বারা প্রভাবিত হয় ।
সাফল্যের সম্ভাব্যতা:
প্রতিটি কৌশল নির্ধারণের পূর্বে এর সাফল্য অর্জনের সম্ভাব্যতা বিচার-বিশ্লেষণ করতে হয়। এই ব্যাপারে প্রধানত দু’টি চলক বিশেষভাবে বিবেচনা করা হয়; যথা- ভবিষ্যৎ পরিবেশ এবং প্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়া। নিম্নে তাদের সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো:
(ক) ভবিষ্যৎ পরিবেশ:
কোনো কৌশল গ্রহণের পূর্বে নির্বাহীকে ভবিষ্যৎ পরিবেশের প্রাক্কলন করতে হয়। প্রাক্কলনের যথার্থতার উপর অনেকাংশে কৌশলের সাফল্য নির্ভর করে। ভবিষ্যৎ পরিবেশ অনুকূলে আনয়নের মাত্রার তারতম্য অনুসারে কালক্ষেপণের কৌশল বা ‘কানে তুলা দেওয়ার কৌশল’ গ্রহণ করা হয়ে থাকে ।
(খ) প্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়া:
বিবেচ্য কৌশল গ্রহণের ফলে সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহের প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে সে সম্বন্ধে নির্বাহীকে অবহিত হতে হয়। কোনো কৌশল গ্রহণের ফলে অধিকাংশ কর্মী প্রতিকূলতার সম্মুখীন হলে বা অধিকাংশ কর্মীর দ্বারা তা প্রত্যাখ্যাত হওয়ার আশংকা থাকলে সেই রকম কৌশল গ্রহণ করা হয় না। অন্যদিকে, প্রস্তাবিত কৌশল বিষয়ে অধিকাংশ ব্যক্তির প্রতিক্রিয়া অনুকূল হলে তা সহজেই নির্বাচন করা সম্ভব হয় ।
খরচ:
কৌশল নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রকার ব্যয়ের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হয়। ব্যয় বিবেচনার ক্ষেত্রে আর্থিক ব্যয় ছাড়াও অন্যান্য ক্ষতির বিষয় বিবেচনা করা হয়। কৌশল নির্বাচনের ক্ষেত্রে ব্যয় সম্বন্ধীয় যে সমস্ত বিষয় বিচার-বিশ্লেষণ করা হয় নিম্নে তাদের উল্লেখ করা হলো :
আরও দেখুন :