কার্যসংশ্লিষ্টতায় প্রভাব বিস্তারকারী উপাদান

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় কার্যসংশ্লিষ্টতায় প্রভাব বিস্তারকারী উপাদান । যা বাউবি ওএসএমবিএ ২২০১ কৌশলগত মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা – ইউনিট ৬ এর অন্তর্গত।

কার্যসংশ্লিষ্টতায় প্রভাব বিস্তারকারী উপাদান

 

কার্যসংশ্লিষ্টতায় প্রভাব বিস্তারকারী উপাদান

 

গবেষণায় দেখা গেছে যে, সত্যিকার কার্যসংশ্লিষ্টতা থাকতে হলে দুটি প্রধান উপাদান বিবেচনা করতে হবে।

(i) যৌক্তিক দিক (Rational Aspect) : এটি প্রতিষ্ঠানের সাথে কর্মীদের ভূমিকা এই মর্মে সম্পর্কযুক্ত করে যে, এটি প্রতিষ্ঠানের বৃহৎ পরিসরে কোথায় মানানসই হয় এবং কীভাবে এটি ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যের সাথে যুক্ত হয় ।

(ii) আবেগজনিত দিক (Emotional Aspect) : এটি বলে দেয় যে, কর্মীরা প্রতিষ্ঠানকে কীভাবে অনুভব করে, তাদের ব্যক্তিক প্রচেষ্টায় কাজ সম্পাদন করতে হবে এমন অনুভূতি হয় কি না এবং ব্যবস্থাপকের সাথে তারা কীভাবে সম্পর্ক গড়ে তুলবে।

এ দুটি দিক ছাড়াও আরো কিছু উপাদান রয়েছে যা বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন । এগুলো নিম্নরূপ :

১। কাজ নিজেই (Work Itself) : কাজ নিজেই কার্যসন্তুষ্টি সৃষ্টি করতে পারে, যেন কর্মীরা নিজে থেকেই প্রণোদিত এবং এতে কার্যসংশ্লিষ্টতা বৃদ্ধি পায়। উপাদানগুলো হলো- আনন্দদায়ক ও চ্যালেঞ্জিং কাজ, দায়িত্ব (নিজস্ব সম্পদের চেয়ে প্রতিষ্ঠানের কাজকে গুরুত্ব দেওয়া), স্বাধীনতা (স্বাধীনভাবে কাজ করা), দক্ষতা ও সক্ষমতার উন্নয়ন ও ব্যবহারের সুযোগ, কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সম্পদ এবং অগ্রগামী হওয়ার সুযোগ ইত্যাদি।

২। কার্যপরিবেশ (The Work Environment) : একটি আইনসম্মত, সক্ষম, সমর্থনযোগ্য এবং উৎসাহজনক কার্যপরিবেশ কর্মীদের কার্যসংশ্লিষ্টতাকে প্রভাবিত করে, যেন তারা বিধি-বিধান মানে এবং সে মোতাবেক কার্য চালিয়ে যায়। একটি আইনগত সক্ষম পরিবেশ কাজের এমন অবস্থা সৃষ্টি করে যে, এটি উচ্চ কার্যসম্পাদন এবং ফলপ্রসূ স্বাধীন আচরণকে উৎসাহিত করে।

এ পরিবেশের মধ্যে রয়েছে কার্যপ্রক্রিয়াকরণ, যন্ত্রপাতি ও তা ব্যবহারের সুযোগ এবং পরিবেশ যেখানে কর্মীরা কাজ করে। সমর্থনযোগ্য পরিবেশ হলো সেটি, যেখানে সন্তোষজনক কর্মজীবন অর্জন করা যায়, অতিরিক্ত আবেগ নয়, স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ কার্যপরিবেশ অর্জনের জন্য পর্যাপ্ত মনোযোগ দেওয়া হয়, চাকরির নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়া হয় এবং ব্যক্তিক উন্নয়নকে বিবেচনায় নেয়া হয় ।

উৎসাহজনক পরিবেশ হবে সেটিই, যেখানে প্রতিষ্ঠানের স্পষ্ট ভিশন ও কতগুলো সমন্বিত মূল্যবোধ থাকবে যা মানতেই হবে, যা হবে সমষ্টিগত, পরিমাপযোগ্য ও নিয়ন্ত্রিত। প্রতিষ্ঠানের কার্যপরিবেশ, মানব সম্পদ নীতির প্রয়োগ, স্বেচ্ছাধীন আচরণ প্রদর্শনের সুযোগ, পুরস্কার পলিসি, কার্যঘন্টা প্রভৃতি দ্বারা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ প্রভাবিত হয়, যার প্রভাব কার্যসম্পাদনের ওপর পড়ে। সুতরাং ব্যবস্থাপনাকে এগুলো খেয়াল রাখতে হবে।

 

Google News
আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন

 

৩। নেতৃত্ব (Leadership) : নেতৃত্ব হলো কর্মীদেরকে কাজে প্রভাবিতকরণের একটি হাতিয়ার। ভালো নেতৃত্বের কারণে কর্মীগণ প্রতিষ্ঠানের কাজের প্রতি অনুকূল আচরণ করে থাকে। এটি হলো এমন মাত্রা যা কার্যসংশ্লিষ্টতা ও স্বেচ্ছাধীন আচরণকে এমনভাবে প্রভাবিত করে, যা প্রতিষ্ঠানের জন্য অনুকূল হয় এবং প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা ও মালিকগণও সন্তুষ্ট থাকে।

এ ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপকগণ ও দলনেতাগণ কার্যনকশা প্রণয়ন, কার্যবণ্টন, কর্তৃত্ব প্রভৃতি ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাধীন আচরণ করে থাকে। তারা প্রতিটি কাজের গুরুত্ব কর্মীদেরকে বলতে পারে। তারা কর্মীদেরকে কার্যসম্পাদনের সুযোগ দিয়ে তাদের অবদানকে স্বীকৃতি দিতে পারে। এতে কর্মীগণ খুশি হয় যার অনুকূল প্রভাব প্রতিষ্ঠানের উপর পড়ে ।

৪। ব্যক্তিক উন্নয়নের সুযোগ (Opportunities for Personal Growth) : অধিকাংশ মানুষই উন্নতি করতে চায় । Ed Lawler বলেন, “মানুষ শিক্ষাকে উপভোগ করে এতে কোনো সন্দেহ নেই। এতে মানুষের অধিকার প্রতিফলিত হয়।” প্রতিষ্ঠান ও কর্মী উভয়ের জন্য নীতি হলো- চলমান প্রশিক্ষণ ও উন্নয়নকে মূল্যায়ন করতে হবে।

শিক্ষা হলো সন্তোষজনক ও পুরস্কৃতকরণের অভিজ্ঞতা এবং এটি অন্তঃপ্রণোদনায় অবদান রাখে । Alderfer একজন কর্মীকে পুরস্কারপ্রাপ্তির সুযোগ গ্রহণের উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, “উন্নয়নে সন্তুষ্টির প্রয়োজনীয়তা নির্ভর করে একজন কর্মী কতটুকু সুযোগ পেল যে, সে কী হতে চায় এবং কী হতে পারে।”

(Satisfactionindd of growth needs depends on a person finding the opportunity to be what he or she is most fully and to act become what he or she can) । উন্নয়নের সুযোগ হলো একটি প্রণোদনামূলক উপাদান যা সরাসরি কর্মসংশ্লিষ্টতাকে প্রভাবিত করে । এটি একটি কাজের অন্তর্নিহিত উপাদান ।

৫। অবদান রাখার সুযোগ (Opportunity to Contribute) : কর্মীদের কর্মসংশ্লিষ্টতা বাড়বে যদি তাদের কথা বলার অধিকার থাকে এবং তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হয়। এতে তাদের উদ্ভাবনী ধারণাকে জানাতে পারবে এবং তাদের মনে হবে যে, তারাও প্রতিষ্ঠানে অবদান রাখছে ।

রিশেষে বলা যায় যে, উপর্যুক্ত উপাদানগুলো কর্মীদের কার্যসংশ্লিষ্টতায় প্রভাব বিস্তার করে। তাই ব্যবস্থাপকদেরকে এগুলো মনে রাখতে হবে।

 

কার্যসংশ্লিষ্টতায় প্রভাব বিস্তারকারী উপাদান

 

আরও দেখুন :

কার্যসংশ্লিষ্টতা ও স্বেচ্ছাধীন আচরণ

Leave a Comment