আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় পেশা বা ক্যারিয়ারের লক্ষ্য অর্জনের পদক্ষেপসমূহ অথবা ব্যবস্থাপনা ক্যারিয়ারের সাফল্যের শর্তসমূহ
Table of Contents
পেশা বা ক্যারিয়ারের লক্ষ্য অর্জনের পদক্ষেপসমূহ অথবা ব্যবস্থাপনা ক্যারিয়ারের সাফল্যের শর্তসমূহ
পেশা বা ক্যারিয়ারের লক্ষ্য অর্জনের পদক্ষেপসমূহ অথবা ব্যবস্থাপনা ক্যারিয়ারের সাফল্যের শর্তসমূহ
একজন ব্যবস্থাপকের সাফল্যজনক পেশা বা ক্যারিয়ার গঠনের জন্য নিম্নোক্ত শর্তসমূহ পালন করা খুবই প্রয়োজন:
বিচার বিশ্লেষণের সাথে প্রথম কর্ম নির্বাচন ( Select the first job judiciously):
একজন ব্যবস্থাপকের পেশা বা ক্যারিয়ার নির্বাচনের ক্ষেত্রে অবশ্যই এমন একটি প্রতিষ্ঠান বা বিভাগ নির্বাচন করা উচিত যেখানে যথেষ্ট অগ্রগতির সুযোগ আছে। অনেক প্রতিষ্ঠান বা বিভাগ আছে যেখানে দ্রুত অগ্রগতি বা পদোন্নতির ব্যবস্থা আছে আবার এমন অনেক প্রতিষ্ঠান বা বিভাগ আছে যেখানে অগ্রগতি বা পদোন্নতির সুযোগ খুবই কম।
তাই একজন ব্যক্তির প্রথম কর্ম নির্বাচন বা যোগদানের এর সময় অবশ্যই বিচার বিশ্লেষণ করে এমন প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করা উচিত যেখানে পদোন্নতি বা অগ্রগতির যথেষ্ঠ সুযোগ আছে।
দক্ষতা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্বপালন (Perform duties with efficiency and honesty ) :
দক্ষতা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন কর্মজীবনের অগ্রগতি জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একজন ব্যবস্থাপকের সাফল্য অর্জনের গুরুত্বপূর্ণ শর্তই হচ্ছে নিষ্ঠা ও দক্ষতার সঙ্গে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব সম্পাদন করা। আর এটাতে যদি ব্যর্থ হয় তবে উক্ত ব্যবস্থাপকের দ্বারা সাফল্য অর্জন অসম্ভব হয়ে ওঠে। তাই দক্ষতা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্বপালন হচ্ছে একজন ব্যবস্থাপকের পেশা বা ক্যারিয়ার গঠনের পথ সুগম করে।
সঠিক ভাবমূর্তি তৈরি (Creating the right image) :
একজন ব্যবস্থাপক তার দক্ষতা, কার্য সম্পাদনের নিপুণতা ও কর্ম কৌশলের প্রয়োগ দ্বারা সফল ব্যবস্থাপক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। আর এর ফলে প্রতিষ্ঠানে উক্ত ব্যবস্থাপকের সঠিক ভাবমূর্তি গড়ে ওঠে যা ঐ ব্যবপস্থাপকের পেশা বা ক্যারিয়ারের অগ্রগতির পথ সুগম করে।
একজন ব্যবস্থাপককে তার ব্যবহার, নেতৃত্ব প্রদান এবং কর্মপন্থা গ্রহণে এমন সব কৌশল অবলম্বন করা উচিত যেন কর্মক্ষেত্রে তার সঠিক ভাবমূর্তি তৈরির পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানে সফলতা অর্জনের পথ সুগম হয়।
ক্ষমতার কাঠামো শিক্ষা (Learn the power structure):
একজন ব্যবস্থাপককে সংগঠন কাঠামোর কর্তৃত্বের সম্পর্ক ভালোভাবে বুঝতে হবে। অর্থাৎ, একজন ব্যবস্থাপককে জানতে হবে যে প্রকৃতঅর্থে সংগঠনের দায়িত্ব কার ওপর ন্যস্ত বা সংগঠনের ইনচার্জ কে, কে কার কাছে কতটুকু গ্রহণযোগ্য এবং কে কার নিকট জবাবদিহি করবে। অতএব ব্যবস্থাপককে সংগঠনে ক্ষমতা কাঠামো গুরুত্বের সঙ্গে অনুধাবন করতে হবে।
সাংগঠনিক সম্পদের নিয়ন্ত্রণ লাভ (Gain control of organizational resources):
একজন ব্যবস্থাপককে সংগঠনের সম্পদসমূহের যথাযথ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক সম্পদসমূহের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতার উৎস হিসেবে কাজ করে। বিশেষ করে ব্যক্তির জ্ঞান ও দক্ষতা হচ্ছে নিয়ন্ত্রণের কার্যকর সম্পদ। এসব বিষয় সংগঠনের ব্যবস্থাপকের গুরুত্ব বাড়ায়। চাকরির অগ্রগতি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং সর্বোপরি পেশা বা ক্যারিয়ার গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
দৃশ্যমান থাকা (Stay visible) :
একজন ব্যবস্থাপককে এমনভাবে কার্যসম্পাদন করতে হবে যেন প্রতিষ্ঠানের উর্ধ্বতন মহলের দৃষ্টি গোচরে আসরে পারে। ব্যবস্থাপককে নিজের কর্তৃত্ব যথাযথভাবে প্রদর্শন করতে হবে এবং এমনভাবে দায়িত্ব সম্পাদন করতে হবে যাতে ঊর্ধ্বতন মহলে প্রশংসা কুড়াতে সক্ষম হয়।
ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সমর্থনদান (Support your boss):
ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাজে সহায়তা ও সমর্থন দান করা একজন ব্যবস্থাপকের পেশা বা ক্যারিয়ারে সাফল্য অর্জনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই জন্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নেতিবাচক মন্তব্য করা এবং উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে সমীহ না করার প্রবণতা পরিহার করা উচিত। উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে মতের অমিল হলে পদ পরিবর্তন করে অন্য পদে যাওয়ার চেষ্ট করা উচিত যাতে পেশায় অগ্রগতির ক্ষেত্রে কোনো বিঘ্নতা সৃষ্টি না হয় ।
গতিময়তা বজায় রাখা ( Stay mobility):
উচ্চকাঙ্ক্ষি ব্যবস্থাপকগণকে পেশার বা ক্যারিয়ারের গতিময়তা রক্ষার প্রতি দৃষ্টিপতি করা উচিত। বিভিন্ন ভৌগলিক অবস্থানে দায়িত্ব পালন করতে পারে এমন ব্যবস্থাপক দ্রুত অগ্রগতি লাভ করতে পারে। এর ফলে সংগঠনের পরিবর্তন এবং লক্ষ্য অর্জন অত্যন্ত সহজ হয়ে যায়।
দীর্ঘদিন একই পদে না থাকা (Don’t stay too long in the same position):
একই পদে দীর্ঘদিন থাকা বা অবস্থান করা একজন ব্যবস্থাপকের পেশা বা ক্যারিয়ারের অগ্রগতির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। এক্ষেত্রে যতদ্রুত সম্ভব বদলি বা অন্যকোনো ব্যবস্থা করে নতুন কাজ বা দায়িত্বে নিয়োজিত হওয়া আবশ্যক। বিভিন্ন পদে বা দায়িত্বে কাজের সুযোগ পেলে তা একজন ব্যবস্থাপকের বিভিন্ন পদ বা দায়িত্বের কাজের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি পায় এবং তার পেশা বা ক্যারিয়ারে সফলতা অর্জনের পথ সুগম হয়।
পার্শ্বিক চিন্তা (Think laterally):
আধুনিক ও পরিবর্তনশীল বিশ্বের সাথে খাপ খাইয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে পার্শ্বগত- চিন্তা-ভাবনা থাকা একজন ব্যবস্থাপকের জন্য অত্যন্ত জরুরি। বর্তমান বিশ্বে বিভিন্ন সংগঠনে ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা ব্যাপকভাবে সমাদৃত। তাই কোনো সংগঠনে একজন ব্যবস্থাপকের পেশা বা ক্যারিয়ারে অগ্রগতির বাধার সম্মুখীন হলে অন্য প্রতিষ্ঠানে ক্যারিয়ার গঠনের জন্য চেষ্টা করা উচিত। এভাবেই পেশা বা ক্যারিয়ারের সাথে পার্শ্বিক চিন্তা-ভাবনা থাকা অত্যন্ত জরুরি।
শুভাকাঙ্ক্ষীদের সহায়তা (Help from mentor) :
ব্যবস্থাপককে প্রতিষ্ঠানে কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সান্নিধ্যে থেকে তার উপদেশ, পরামর্শ ও দিক-নির্দেশনা লাভের চেষ্টা করা উচিত। এটা একজন ব্যবস্থাপকের পেশা বা ক্যারিয়ারে অগ্রগতি লাভে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
দক্ষতার ভিত্তিতে পেশা বা ক্যারিয়ার গঠন:
একটি প্রতিষ্ঠানের সফলতার জন্য দক্ষ ব্যবস্থাপকের গুরুত্ব অপরিসীম। আর এই কারণে প্রতিষ্ঠানে দক্ষ ব্যবস্থাপকের চাহিদা অনেক বেশি। একজন ব্যবস্থাপকের পেশা বা ক্যারিয়ারের অগ্রগতি নির্ভর করে তার দক্ষতার ওপর। কর্মক্ষেত্রে একজন ব্যবস্থাপক যত দ্রুত দক্ষতা অর্জন করতে পারবে তত দ্রুতই উক্ত ব্যবস্থাপক পেশায় বা ক্যারিয়ারে সাফল্য অর্জন করতে পারবে।
আরও দেখুন :