আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় পুরস্কারের ধারণা ও সংজ্ঞা । যা বাউবি ওএসএমবিএ ২২০১ কৌশলগত মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা – ইউনিট ৮ এর অন্তর্গত।
Table of Contents
পুরস্কারের ধারণা ও সংজ্ঞা
পুরস্কারের ধারণা
“Rewards are the special types of motivation.” অর্থাৎ, পুরস্কার হলো বিশেষ ধরনের প্রেষণা। প্রাচীনকালে মানুষ তার নিজ প্রয়োজনে বিভিন্ন ধরনের কাজ করে জীবনধারণ করতো। পরবর্তীতে দাসপ্রথার প্রচলন হয়। অর্থাৎ অন্যকে দিয়ে নিজের কাজ করিয়ে নেওয়া হতো। সেখানে পারিশ্রমিক বা বেতনের কোনো প্রচলন ছিল না। মানুষকেই অর্থের বিনিময়ে কিনে নিজের দাস বানাতো।
দাসপ্রথার বিলুপ্তির পর প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা তাদের কাজ সম্পাদনের জন্য কর্মী নিয়োগ দিত। আর এই কর্মীর শ্রমের বিনিময়ে যে অর্থ প্রদান করা হতো তা-ই বেতন বা পুরস্কার। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানের কার্যসম্পাদনের জন্য কর্মীদের যে আর্থিক ও অনার্থিক সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হয়, তাকে পুরস্কার বলে। প্রেষণার মূল উৎসই হলো পুরস্কার বা বেতন-ভাতা।
বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার জনক F. W. Taylor ১৮০০ সালের শেষভাগে প্রতিষ্ঠানের বেতন প্রদানের জন্য পার্থক্যমূলক বেতন হার পদ্ধতি (Differential Price Rate System) প্রবর্তন করেন। বর্তমান যুগে প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মীদের পুরস্কার প্রদানের জন্য বিভিন্ন মাধ্যম বিদ্যমান রয়েছে, যা প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
পুরস্কারের সংজ্ঞা
সাধারণত কর্মীদের কাজের বিনিময়ে যে বেতন ভাতা, পারিশ্রমিক বা নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হয়, তাকে পুরস্কার বলে । তাছাড়া শুধুমাত্র বেতন বা পারিশ্রমিক নয়; বরং বিভিন্ন ধরনের অনার্থিক সাহায্য বা সুযোগ-সুবিধাও পুরস্কার নামে অভিহিত হয়। পুরস্কার হলো এক ধরনের প্রণোদনা। অর্থাৎ, কর্মীরা এ পুরস্কার পাওয়ার আশায় প্রতিষ্ঠানের সমস্ত কাজ সম্পাদন করে থাকে এবং তাতে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়। প্রতিষ্ঠানে নানা ধরনের পুরস্কার বিদ্যমান রয়েছে। যেমন: বেতন, কমিশন, প্রশংসা, বোনাস, সম্মান, পদোন্নতি, কাজের স্বীকৃতি, মর্যাদা ও ভালো পদায়ন প্রভৃতি ।
Wikipedia- তে বলা হয়েছে, “Reward is the attractive and motivational property of a stimulus that induces behaviour.” অর্থাৎ, “পুরস্কার হলো উদ্দীপকীয় ও প্রেরণাদানকারী উপাদান যা আচরণকে প্রভাবিত করে থাকে।”

Robert Kreitner এ প্রসঙ্গে বলেছেন যে, “Rewards may be defined broadly as the material and Wind psychological pay offs for performing tasks in the work place.” অর্থাৎ, “ব্যাপকার্থে পুরস্কার হলো কার্যক্ষেত্রেngs to ad কার্যসম্পাদনের জন্য বস্তুগত ও মনস্তাত্ত্বিক পাওনা মিটানোর প্রক্রিয়া।”
Ivancevich Matteson এর মতে, “Rewards are used for increasing job performance and ensuring organizational commitment..” অর্থাৎ, “পুরস্কার কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি ও সাংগঠনিক অঙ্গীকার নিশ্চিত করার জন্য ব্যবহার করা হয়।”
উপর্যুক্ত আলোচনা পর্যালোচনা করলে বোঝা যায় যে, পুরস্কার এমন একটি প্রক্রিয়া যার ফলে কর্মীদের দক্ষতা, জ্ঞান বাড়ে এবং তারা দ্রুতগতিতে কাজ সম্পাদন করে।
পুরস্কার ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা বা গুরুত্ব
পুরস্কার হলো কর্মীদের কাজ করানোর জন্য উত্তম ব্যবস্থা। এর ফলে কর্মীরা দক্ষ হয়ে গড়ে ওঠে। নিম্নে পুরস্কার ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা বা গুরুত্ব দেওয়া হলো :
১. কর্মীদের প্রেষণা (Employe motivation) : কর্মীদের প্রেষণা প্রদান করা হলো পুরস্কার ব্যবস্থার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক। এতে কর্মীরা কাজের প্রতি আগ্রহী হয়। প্রেষণাদানের ফলে কর্মীরা দক্ষ হয়ে ওঠে। ফলে উদ্দেশ্য অর্জন সহজতর হয়।
২. মনোবল বাড়ানো (Increase morale) : পুরস্কার প্রদানের ফলে কর্মীদের মধ্যে মনোবল বৃদ্ধি পায়। এভাবে তারা কাজের প্রতি সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে। ফলে প্রতিষ্ঠানের উন্নতি সাধন সম্ভব হয়।
৩. উৎপাদন বৃদ্ধি (Increase productivity) : প্রতিষ্ঠানে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির অন্যতম পদ্ধতি হলো পুরস্কার। এর ফলে শ্রমিকরা কাজে দক্ষ হয় এবং প্রতিষ্ঠান সুনাম অর্জন করে। কাজের প্রতি সন্তুষ্টি বৃদ্ধি পেলে উৎপাদনও বৃদ্ধি পায়। উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে প্রতিষ্ঠানের মুনাফা অর্জনও বৃদ্ধি পায়। ফলে কর্মীদের বেতন কাঠামো পরিবর্তন হয়।
৪. মর্যাদা বৃদ্ধি (Increase dignity) : একজন কর্মীকে যদি তার যোগ্যতা ও কাজ অনুযায়ী পুরস্কার দেওয়া হয়, তবে সে নিজেকে মর্যাদাবান ব্যক্তি মনে করে। ফলে তার কর্মস্পৃহা বৃদ্ধি পায়। এতে প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনশীলতাও বৃদ্ধি পায় ।
৫. অলসতা দূরীকরণ (Remove idleness) : প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মীদের অলসতা রোধ কল্পে তাদের ভালো কাজের জন্য পুরস্কার প্রদান করলে সে সন্তুষ্ট হয়। অলসতা দূরীকরণের ক্ষেত্রে পুরস্কার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।
৬. জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন (Promote life style) : জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের ক্ষেত্রে পুরস্কার অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এর ফলে তারা আর্থিক সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকে। সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি পায় ।
৭. একঘেয়েমি হ্রাসকরণ (Reduce monotony) : কর্মীদের পুরস্কার প্রদানের ফলে তাদের একঘেয়েমি দূর করা সম্ভব হয়। কারণ, একই রকম কাজ বারবার করতে কর্মীরাও বিরক্ত হয়ে যায়। তাই তাদের এই একঘেয়েমি দূর করার জন্য উপায় হলো পুরস্কার প্রদান ।
পরিশেষে বলা যায় যে, প্রতিষ্ঠানকে তার লক্ষ্য অর্জন করতে হলে সুষ্ঠু পুরস্কার ব্যবস্থা রাখতে হবে। তা না হলে প্রতিষ্ঠান তার কাম্য লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে না ।
আরও দেখুন :